বাংলা ভাষা আন্দোলন

উইকিউক্তি, মুক্ত উক্তি-উদ্ধৃতির সংকলন থেকে
আমাদের ভাষা-আন্দোলনের শিক্ষা হলো: সকল ভাষার সমান মর্যাদা। আর মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে কখনো শাসন-ত্রাসন দিয়ে দমন করা যায় না।

'বাংলা ভাষা আন্দোলন' ছিল ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশে) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তদানীন্তন পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও, বস্তুত এর বীজ রোপিত হয়েছিল বহু আগে; অন্যদিকে, এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

উক্তি[সম্পাদনা]

  • এই আন্দোলন যে এত তীব্র ও ব্যাপক আকার ধারণ করিতে পারে তাহা পার্টি নেতৃত্ব বুঝিতে পারে নাই। জনগণের মনে সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রচণ্ড বিক্ষোভ জাগিয়াছিল তাহা পার্টি নেতৃত্ব ছোট করিয়া দেখিয়াছিল। এই কারণে ২০ তারিখ ১৪৪ ধারা জারি হওয়ার পর কি কর্তব্য হইবে এই সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ না দিয়া সেদিন পার্টি নেতৃত্ব কমরেডদের শুধু বলিয়াছিলেন যে, ২১ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছাত্র জমায়েত করিয়া সেখানে পরবর্তী কর্মপন্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক এবং কমরেডরা যেন সেই সিদ্ধান্ত মানিয়া নেন।
    • কম্যুনিস্ট পার্টির ভাষা আন্দোলনের দলিল, উদ্ধৃত: আবদুল মতিনআহমদ রফিক, ভাষা আন্দোলন ইতিহাস ও তাৎপর্য, পৃ. ৯১-৯২।
  • প্রথম পর্যায়ে বাংলা ভাষার আন্দোলন ছাত্র এবং শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু একথাও সত্য যে বহু ছাত্র ও শিক্ষিত জনসাধারণ তৎকালে উর্দুর সপক্ষে ছিলেন। এ জাতীয় উর্দু সমর্থক এবং গুণ্ডাদের সহায়তায় প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিসমূহ ভাষা আন্দোলনের কর্মীদের উপর বহুবার হামলা করে।
    • বদরুদ্দীন উমর, পূর্ববাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তত্কালীন রাজনীতি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ৪৯।
  • ভাষা-আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সকল সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু হবে।
    • ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমিতে একটি সভায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান, উদ্ধৃত: দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১।
  • When the fear of Hindu domination was removed after 1947, the Bengali educated proto-elite opposed Urdu more openly and forcefully. As the rulers of East Bengal were the ashraf and the Muslim League leadership in West Pakistan also considered Urdu a symbol of national integration, the Bengali language movement was suppressed, and on February 21, 1952, some activists were killed by the police in Dhaka. This date became a symbol of resistance against the Punjabi-dominated West Pakistani ruling elite. Bengali nationalism arose in response to perceived West Pakistani domination and internal colonialism and, in 1971, led to the birth of Bangladesh.
    • অনুবাদ: ১৯৪৭ সালের পর যখন হিন্দু আধিপত্যের ভয় দূর হয়ে যায়, তখন প্রথমদিককার বাঙালি শিক্ষিত অভিজাতরা আরও প্রকাশ্যে ও জোরপূর্বক উর্দুর বিরোধিতা করে। পূর্ব বাংলার শাসকরা যেহেতু আশরাফ ছিলেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম লীগ নেতৃত্বও উর্দুকে জাতীয় সংহতির প্রতীক বলে মনে করে, তাই বাংলা ভাষা আন্দোলন দমন করা হয় এবং ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পুলিশের হাতে কিছু কর্মী নিহত হয়। এই তারিখটি পাঞ্জাবি অধ্যুষিত পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠে। কথিত পশ্চিম পাকিস্তানি আধিপত্য ও অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিকতার প্রতিক্রিয়ায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়।
      • তারিক রহমান, ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড ইথনিসিটি ইন পাকিস্তান, এশিয়ান সার্ভে, খণ্ড ৩৭, ইস্যু ৯, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭, পৃ. ৮৩৬।
  • আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আমাদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠারই ইতিহাস। সেই ইতিহাস সৃষ্টির পেছনে এ দেশের সংগ্রামী ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-কৃষক-শ্রমিক-ব্যবসায়ীসহ বহু মানুষের আত্মাহুতি, ত্যাগ ও তিতিক্ষার কথা আমাদের অজানা নয়। জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়ের সার-সত্য এই ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তভেজা পথ ধরে সংঘটিত হয়েছিল ঊনসত্তরের গণআন্দোলন; আর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে সংযোজিত হল একটি দেশ-স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বস্তুত মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামী বীজ বোপন করা হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই। সেই সঙ্গে একুশের চেতনায় শাণিত জীবনবোধ থেকেই আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখেছি। শুধু প্রতিবাদই নয়-মৃত্যুকেও হাসিমুখে বরণ করার ক্ষমতাও অর্জন করেছি।
    • তসিকুল ইসলাম, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভাষা আন্দোলন, পৃ. ১।
  • আমাদের ভাষা-আন্দোলনের শিক্ষা হলো: সকল ভাষার সমান মর্যাদা। আর মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে কখনো শাসন-ত্রাসন দিয়ে দমন করা যায় না।
  • আমি মনে করি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চলেছে এবং তা দু'দিক থেকে একদিকে কিছু নতুন দাবীদারকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্ঠা চালানো হয়েছে এবং অন্য দিকে কারো কারো নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তাধারার কাঠামোতে ফেলার জন্য এ মহান আন্দোলনের ইতিহাসকে ভিন্নরুপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন অনেকে।
    • বিশেষ সাক্ষাৎকারে গাজীউল হক, রক্ত ঝরা ভাষা আন্দোলন, শামীম জাহান চৌধুরী, পৃ. ২০।
  • সঙ্গত কারণেই ভাষা আন্দোলনে ছাত্র ও শিক্ষকের অংশ গ্রহণ ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির ঘটনার ব্যাপকতা, বহু সংখ্যক গ্রেপ্তার ও সরকারি নীতি সাধারণভাবে ভয়ের সৃষ্টি করে। মায়ের ভাষার পক্ষে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করার প্রশ্নে দুর্বলতা প্রদর্শনের প্রধান কারণ ছিল রাজরোষ ও সম্ভাব্য নিপীড়ন।
    • ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র, রতন লাল চক্রবর্ত্তী, পৃ. ১১।
  • Bengali language movement was not launched by any single individual, pressure group or political party. Many student leaders spearheaded the movement throughout this period. However, the marginal roles of some of the participants have often been exaggerated through invented memories. This movement provided ample opportunity to many political leaders for participating in this decisive struggle for establishing Bengali as one of the state languages of Pakistan.
    • অনুবাদ: বাংলা ভাষা আন্দোলন কোনো একক ব্যক্তি, চাপ গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দল দ্বারা শুরু হয়নি। এই সময় জুড়ে অনেক ছাত্রনেতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। যাইহোক, কিছু অংশগ্রহণকারীদের প্রান্তিক ভূমিকা প্রায়ই উদ্ভাবিত স্মৃতির মাধ্যমে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। এই আন্দোলন অনেক রাজনৈতিক নেতাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার এই সিদ্ধান্তমূলক সংগ্রামে অংশগ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ করে দেয়।
      • ল্যাঙ্গুয়েজ কন্ট্রোভার্সি: ইম্প্যাক্টস অন ন্যাশনাল পলিটিক্স অ্যান্ড সেশ্যেশান অফ ইস্ট পাকিস্তান, সাউথ এশিয়ান স্টাডিস, লাহোর, খণ্ড ২৫, ইস্যু ১, জানুয়ারি-জুন ২০১০, পৃ. ১০২।
  • বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন জাতীয় চরিত্রের একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন। সূচনায় ছাত্র-আন্দোলন হিসেবে এর প্রকাশ ঘটলেও দ্রুতই তা দেশজুড়ে গণ-আন্দোলনে পরিণত হয় সর্বশ্রেণির মানুষের সমর্থন নিয়ে। এর মূল দাবি পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও এ আন্দোলন দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে বাঁকফেরা গুণগত পরিবর্তন ঘটায়। প্রমাণ, বায়ান্ন থেকে পরবর্তী কয়েক বছরের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন।
  • ভাষা আন্দোলনের পিছনে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের আর্থিক অসাম্য বড় কারণ ছিল। এই অসাম্যই পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের বাঙালি সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। সাংস্কৃতিক আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে পর্যবসিত হয়। এবং সেই আন্দোলন থেকেই এক দিন জন্ম নেয় আওয়ামি লিগ।
  • পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দিবসটি পর্যন্ত বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের মনে উর্দুভীতি ছিল না, ছিল পরম উর্দুপ্রীতি। উর্দুকে 'ইসলামি ভাষা' মনে করা হতো। বাংলাকে 'হিন্দুর ভাষা' বলে অনেক মুসলিম সমাজপতি অবজ্ঞা দেখাতেন। বাঙালি মুসলমান পরিচালিত অধিকাংশ বাংলা সংবাদপত্রের নাম ছিল উর্দু, ফার্সি অথবা আরবিতে। যেমন আজাদ, ইত্তেহাদ, সোলতান, সওগাত, তকবির ইত্যাদি। বাঙালি মুসলমান অভিজাত শ্রেণি উর্দুতে কথা বলা আভিজাত্যের প্রমাণ হিসেবে দেখত। বাংলা ভাষা ছিল অনেকটা 'ইতরজনের ভাষা'। এই অবস্থায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতে বাঙালি মুসলমান হটাৎ কী করে আবিষ্কার করল, তারা মুসলমান বটে, তবে আগে বাঙালি এবং বাংলা ভাষা তাদের মায়ের ও প্রাণের ভাষা এবং এই ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বায়ান্নতে অকাতরে প্রাণ দিল, তা এক বিস্ময়ের বিষয়। ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৬১ বছর পর আমার কোনো কোনো গবেষক বন্ধুর ধারণা, ভাষা আন্দোলন পরে ব্যাপক জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হলেও প্রথমে তার শুরু শ্রেণি-আন্দোলন হিসেবে। উঠতি শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্তের স্বপ্নভঙ্গ ও অধিকার বঞ্চিত হওয়ার ভীতি ও ক্ষোভ থেকে এই আন্দোলনের শুরু। ফলে বায়ান্নর আগে পর্যন্ত এই আন্দোলনকে দেখা যায় সমাজের সবচেয়ে অগ্রসরমান শ্রেণি হিসেবে পরিচিত ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত ও শিক্ষাঙ্গনেই এই আন্দোলন শুরু হতে।
  • জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ভাষা আন্দোলন ও সংগ্রামের পথ দিয়েই আমরা বাঙালি, আমাদের আলাদা জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠা এবং সেইসাথে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন।
    • ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২-এ চট্টগ্রামে মেরিন একাডেমির ক্যাডেটদের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা, উদ্ধৃত: দ্য ডেইলি স্টার
  • The participation of Bengali women in the Bengali language movement has set a shining example. The participation of women in the Bengali language movement with the students is the first step in establishing the rights of Bengalis. In order to establish Bengali as the mother tongue as the state language, women vibrated the streets in processions. The mothers and sisters of Bengal conveyed the firm oath of the language movement in every house by holding meetings and forming Sangram Parishads in the neighborhoods. When conservative Bengali women took to the streets to protect the dignity of their mother tongue, ignoring the veil, the male society could not stay at home. So this movement of men and women together quickly turned into a sea of people.
    • অনুবাদ: বাংলা ভাষা আন্দোলনে বাঙালি নারীদের অংশগ্রহণ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ছাত্রদের সাথে বাংলা ভাষা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নারীরা মিছিলে রাজপথ কাঁপিয়ে দেয়। বাংলার মা-বোনেরা পাড়া-মহল্লায় সভা-সমাবেশ করে, সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ভাষা আন্দোলনের দৃঢ় শপথ পৌছে দেন। পর্দা উপেক্ষা করে রক্ষণশীল বাঙালি নারীরা যখন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় রাস্তায় নেমেছে, তখন পুরুষ সমাজ ঘরে বসে থাকতে পারেনি। তাই নারী-পুরুষের এই আন্দোলন দ্রুত জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
      • রেজাউল করিম ও শাওন আখতার, দ্য কন্ট্রিবিউশন অফ উইম্যান ইন দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট (১৯৫২): অ্যা হিস্টোরিক্যাল অ্যানালাইসিস, ব্রিটিশ জার্নাল অফ আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিস, ৩(৫), পৃ. ১২৬, ২০২১।
  • ১৯৫২ সালে যখন ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী যে কবিতা লিখেছিলেন, ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। সেই কবিতাটা কিন্তু আমার বাবা আমাদের প্রেস থেকে ছেপে দিয়েছিলেন। সেজন্য আমাদের প্রেসটা কয়েকদিন বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। আমাদের ম্যানেজারের জেল হয়ে গিয়েছিল, তিনি আমাদের আত্মীয়। তিনি বললেন, আমার সাহেব কিছু জানেন না। আমি নিজে ছাপছি এটা। প্রায় ছয় মাস জেল খাটার পর যখন যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হলো, তখন তাকে রিলিজ করা হলো।
  • বাংলা ভাষা আন্দোলন দুটি সত্য আমাদের সম্মুখে খুলিয়া ধরে। প্রথমতঃ একথা পরিষ্কার ধরা পড়ে যে আমাদের গণদাবীর সনদের সর্ব্বনিম্ন দাবী বাংলা ভাষার অধিকার অর্জন করিতেও যুবশক্তি বর্তমান শাসক শ্রেণীর কাছ হইতে লাঠি, গুলি, কাঁদুনে গ্যাস ও জেল পাইয়াছে। ইহাতেই দেখা যায় আমাদের সনদের অন্যান্য মূলদাবী আদায় করিতে হইলে আমাদিগকে কি বিরাট বাধার সম্মুখীন হইতে হইবে। দ্বিতীয়তঃ ইহাও দেখা যায় যে, পাকিস্তানের যুবশক্তি বর্তমান শাসক শ্রেণীর সকল আঘাত উপেক্ষা করিয়াও আন্দোলনের আহ্বানে কিভাবে সাড়া দিয়াছে।
    • বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, প্রথম খণ্ড, সম্পাদক- হাসান হাফিজুর রহমান, প্রকাশক- হাক্কানী পাবলিশার্স, ঢাকা, প্রকাশসাল- ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ (১৪১৬ বঙ্গাব্দ), পৃষ্ঠা ৯৬

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]